ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড এবং সংশোধন করার নিয়ম:
বর্তমানে বাংলাদেশে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড এবং সংশোধন করার প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে। অনেকেই এই বিষয়ে সঠিক তথ্য জানেন না, তাই এখানে আমরা সহজ ভাষায় সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি তুলে ধরবো।
ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করার নিয়ম
আপনার ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে হলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
-
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
প্রথমে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের (NID) ওয়েবসাইটে যান। -
অ্যাকাউন্টে লগইন করুন
যদি আপনার অ্যাকাউন্ট না থাকে, তবে "Create Account" অপশনে ক্লিক করে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলুন।
আপনার NID নম্বর এবং জন্ম তারিখ প্রদান করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন। -
ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করুন
মোবাইল নম্বর এবং ইমেল আইডি যাচাই করে সঠিক তথ্য নিশ্চিত করুন। -
ডাউনলোড অপশনে যান
লগইন করার পর "Download NID" অপশনে ক্লিক করুন।
প্রয়োজনমতো সেবামূল্য (যদি থাকে) পরিশোধ করুন এবং ডিজিটাল কপিটি ডাউনলোড করুন।
ভোটার আইডি সংশোধন করার নিয়ম
আপনার NID কার্ডে কোনো তথ্য ভুল থাকলে সেটি সংশোধন করতে পারেন নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে:
-
অনলাইনে আবেদন করুন
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে গিয়ে লগইন করুন।
"Edit Information" বা "সংশোধন" অপশনটি নির্বাচন করুন। -
প্রয়োজনীয় তথ্য দিন
ভুল তথ্যগুলোর পরিবর্তে সঠিক তথ্য দিন।
সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যেমন: জন্মনিবন্ধন, শিক্ষাগত সনদ, বিবাহের কাবিননামা ইত্যাদি আপলোড করুন। -
ফি পরিশোধ করুন
নির্ধারিত ফি (যদি থাকে) পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করুন। -
অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করুন
সংশোধনের আবেদনটি পর্যালোচনার জন্য জমা দিন।
সংশোধনের স্ট্যাটাস আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়মিত চেক করুন।
ভোটার আইডি কার্ড করতে কত টাকা লাগে ?
নতুন ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করতে কোনো টাকা লাগে না। এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হয়। তবে হারিয়ে যাওয়া কার্ড পুনরুদ্ধার বা স্মার্ট কার্ড পেতে নির্ধারিত ফি দিতে হয়।
স্মার্ট কার্ড বা হারানো কার্ডের জন্য ফি
১. হারানো বা ক্ষতিগ্রস্ত কার্ড পুনরুদ্ধার:
- প্রথমবার পুনরুদ্ধারের জন্য ফি: ২৩১ টাকা।
- দ্বিতীয়বার বা পরবর্তীতে পুনরুদ্ধারের জন্য ফি: ৩৪৫ টাকা।
২. তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে ফি:
- সাধারণ সংশোধনের জন্য: ২৩০ টাকা।
- বড় ধরনের সংশোধনের (যেমন নাম, জন্ম তারিখ) জন্য: ৩৪৫ টাকা।
৩. স্মার্ট কার্ড পাওয়ার জন্য ফি:
- প্রথমবার স্মার্ট কার্ড বিনামূল্যে দেওয়া হয়। তবে হারিয়ে গেলে বা পুনঃপ্রাপ্তির জন্য নির্ধারিত ফি দিতে হয়।
পেমেন্ট প্রক্রিয়া
অনলাইন মাধ্যমে পেমেন্ট করার জন্য বিকাশ, রকেট, অথবা নির্বাচন কমিশন অফিসের নির্ধারিত ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া যায়।
আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতি অনুযায়ী যদি অতিরিক্ত ফি সম্পর্কে জানতে চান, নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করুন অথবা NID ওয়েবসাইট থেকে বিস্তারিত তথ্য দেখুন।
ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে কী করবেন?
ভোটার আইডি কার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ডকুমেন্ট যা নির্বাচন, সরকারি সুবিধা পাওয়া এবং পরিচয় প্রমাণে ব্যবহৃত হয়। যদি এটি হারিয়ে যায়, তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আপনি সহজেই নতুন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
১. ভোটার আইডি কার্ড হারানো সংক্রান্ত জিডি করুন
ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে প্রথমেই স্থানীয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। এটি একটি প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে এবং নতুন কার্ড ইস্যু করার প্রক্রিয়ায় সাহায্য করবে।
২. নতুন কার্ডের জন্য আবেদন প্রস্তুতি নিন
হারানো কার্ড পুনরায় পেতে হলে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করতে হবে। এজন্য আপনার প্রয়োজন হবে:
- জিডির কপি
- পরিচয়পত্রের অন্যান্য ডকুমেন্ট (যেমন জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স)
- আপনার এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
৩. অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া
বর্তমানে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন করা যায়।
প্রক্রিয়া:
- নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে (www.ec.gov.bd) যান।
- “স্মার্ট কার্ড সংশোধন/নতুন ইস্যু” সেকশনে প্রবেশ করুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন এবং হারানো কার্ডের আবেদন ফর্ম সাবমিট করুন।
- আপনার আবেদন নম্বর সংরক্ষণ করুন।
৪. স্থানীয় নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করুন
অনলাইনে আবেদন করার পর আপনার স্থানীয় নির্বাচন অফিসে যাবার প্রয়োজন হতে পারে।
যা সঙ্গে নেবেন:
- অনলাইনে জমা দেওয়া আবেদন ফর্মের কপি
- জিডির কপি
- পরিচয়পত্র এবং ছবি
৫. নতুন কার্ড সংগ্রহ করুন
নির্বাচন কমিশন কর্তৃক যাচাই-বাছাইয়ের পর আপনাকে নতুন ভোটার আইডি কার্ড ইস্যু করা হবে। এটি সংগ্রহ করার সময় আপনার পরিচয়পত্র এবং রিসিপ্ট সঙ্গে রাখুন।
নির্বাচন কমিশনের হেল্পলাইন
যদি প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো জিজ্ঞাসা থাকে, তবে নির্বাচন কমিশনের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করুন:
- ওয়েবসাইট: www.ec.gov.bd
- হটলাইন: ১০৫
ভোটার আইডি হারানোর পর কীভাবে সতর্ক থাকবেন?
- আপনার গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টগুলো নিরাপদ স্থানে রাখুন।
- ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি সংরক্ষণ করুন।
- হারানো কার্ডের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
প্রশ্ন ১: ভোটার আইডি ডাউনলোড করতে কোন ফি দিতে হয়?
উত্তর: প্রথমবারের জন্য ডাউনলোড করতে ফি দিতে হয় না। তবে, হারানো বা পুনঃমুদ্রণের জন্য ফি প্রযোজ্য।
প্রশ্ন ২: সংশোধনের জন্য কত সময় লাগে?
উত্তর: সাধারণত ৭-১৫ কার্যদিবস সময় লাগে। তবে, তথ্য যাচাইয়ের উপর নির্ভর করে সময় পরিবর্তন হতে পারে।
প্রশ্ন ৩: মোবাইল থেকে কি আবেদন করা যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, আপনি মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার যেকোনো ডিভাইস ব্যবহার করে আবেদন করতে পারবেন।
প্রশ্ন ৪: যদি অ্যাকাউন্টে লগইন করতে সমস্যা হয়, কী করব?
উত্তর: লগইন করতে সমস্যা হলে পাসওয়ার্ড রিসেট অপশন ব্যবহার করুন অথবা হেল্পলাইনে যোগাযোগ করুন।
উপসংহার
ভোটার আইডি ডাউনলোড এবং সংশোধন এখন সহজ এবং দ্রুত প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা যায়। সঠিক নির্দেশনা মেনে কাজ করলে আপনি সহজেই এই সেবাগুলি গ্রহণ করতে পারবেন। কোনো ধরণের অসুবিধা হলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন।
Post a Comment