ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা ২০২৪ । কীভাবে ইসরায়েলের জন্ম?

 ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা ২০২৪
ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা ২০২৪

ইসরায়েলের সেনা বাহিনীর অভিযানে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় এক রাতে নিহত হয়েছেন ৬৫ জন এবং আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি। স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত চলা এই অভিযানে ঘটেছে নিহত এবং আহতের এসব ঘটনা।


ফিলিস্তিনের বেতার সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব প্যালেস্টাইন এবং গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের গণসংযোগ দপ্তরের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় ইসরায়েলি স্থল বাহিনীর অভিযান। গাজার খান ইউনিস ও তার আশপাশের এলাকায় ৪০ জন কে হত্যা এবং কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে আহত করার পর উপত্যকার প্রধান শহর গাজা সিটির দিকে অগ্রসর হয় ইসরায়েলি সেনারা। সেখানে তাদের অভিযানে নিহত হয় আরও ২২ জন।

ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা ২০২৪

এছাড়া ফিলিস্তিনের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির নুসেইরাতের একটি স্কুলে বুধবার রাতে অভিযান চালিয়েছে ইসরয়েলি সেনারা। সেই অভিযানে নিহত হয়েছেন আরও ৩ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ১৫ জন। ইসরায়েলি বাহিনীর ভাষ্য, নুসেইরাতের এই স্কুলটি কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করাছিল হামাস।


২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাাশি ২৪২ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় হামাস ও তার মিত্রগোষ্ঠী প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা। এই হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধার করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ), যা এখনও চলছে।


বুধবার যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের সংখ্যা হিসেবে ধরে এক বিবৃতিতে গাজার বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর গত প্রায় এক বছরের অভিযানে গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪১ হাজার ৬৮৯ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ৯৬ হাজার ৬২৫ জন।

ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণ

ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা ২০২৪

প্রায় আট দশক ধরে সংঘাত চলছে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল অঞ্চলে। এই সংঘাত-সহিংসতা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। শুধু ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের ভেতরেই সীমাবদ্ধ না থেকে এই ইস্যু নিয়ে বিরোধের হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে। 


গত শনিবার (৭ অক্টোবর) ভোরে হামাস যোদ্ধারা অতর্কিতে ইসরায়েলে প্রবেশ করে হামলা চালায়। জবাবে গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলের বিমান হামলায় গাজা শহরের বিভিন্ন এলাকা ধূলোয় মিশে গেছে। হামাসের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত এক হাজার এবং গাজায় ৮০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানাচ্ছে। ইসরায়েল সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের পাশাপাশি হামলা আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।

তবে সময়ের চাকা ঘুরে আবার আলোচনায় উঠে আসা এই বিরোধের শেকড় গাঁথা আছে ইতিহাসের গভীরে।

কীভাবে ইসরায়েলের জন্ম?
ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা ২০২৪

বলা হয়, ইসরায়েলের জন্ম মূলত বেলফোর ঘোষণা থেকে। ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব আর্থার বেলফোর ব্রিটিশ ইহুদি সম্প্রদায়ের সদস্য ও আন্দোলনকারীদের নেতা লিওনেল ওয়াল্টার রথশিল্ডকে সম্বোধন করে একটি চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিটি ছিল মাত্র ৬৭ শব্দের। এই চিঠিতে ‘ইহুদি জনগোষ্ঠীর জন্য ফিলিস্তিনে আবাস প্রতিষ্ঠা’ এবং এর অর্জন সহজতর করার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়। চিঠিটি ‘বেলফোর ঘোষণা’ নামে পরিচিত।


অর্থাৎ একটি ইউরোপীয় শক্তি ইহুদিবাদী আন্দোলনকে এমন একটি দেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যেখানে ফিলিস্তিনি আরবরা সংখ্যায় ৯০ শতাংশের বেশি ছিল। ১৯২৩ সালে এই ইস্যুতে একটি ব্রিটিশ ম্যান্ডেট তৈরি করা হয়েছিল যা ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। ইউরোপে নাৎসিবাদের কারণে ইহুদিরা পালাচ্ছিল এবং সেই সময়ে ব্রিটিশরা ব্যাপকহারে ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসনকে সহায়তা করেছিল।


এদিকে ফিলিস্তিনিরা তাদের দেশে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। ১৯৩৬ সালে তারা আরব ন্যাশনাল কমিটি গঠন করে। তারা ক্রমবর্ধমান ইহুদি বসতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা করে এবং ইহুদিদের উৎপাদিত পণ্য বর্জনের ডাক দেয়।


তবে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা সব উপায়ে ইহুদি বসতি স্থাপনাকারীদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। ইহুদিদের প্যারামিলিটারি বাহিনী গঠনেও সহায়তা করে ব্রিটেন। ১৯৩৭ থেকে ১৯৩৯ সাল নাগাদ তিন বছরে আরবদের সঙ্গে ইহুদি সশস্ত্র যোদ্ধাদের লড়াইয়ে অন্তত পাঁচ হাজার ফিলিস্তিনি মারা যায়। ১৫ থেকে ২০ হাজার ফিলিস্তিনি আহত ও সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ বন্দি হয়।     


১৯৪৭ সাল নাগাদ ইহুদিরা ফিলিস্তিনের ছয় শতাংশ দখল করে নেয়। তাদের মোট জনসংখ্যা দাঁড়ায় ফিলিস্তিনের ৩৩ শতাংশে। তখনও ৬৭ শতাংশ আরব জনগোষ্ঠী ছিল দেশটির ৯৪ শতাংশ জমির মালিক।

ইসরাইল ফিলিস্তিন সংঘাতের শুরু কোথায়?
ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা ২০২৪

এই সংঘাতের একদিকে রয়েছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা, আরেকদিকে রয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তার দাবি। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড বেন গুরিয়ন ইহুদিদের জন্য এই অঞ্চলে একটি ’নিরাপদ আবাসভূমি’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নের মুখে পালিয়ে বেড়াতে থাকা ইহুদিরা নিরাপত্তা পাওয়ার আশায়ই ইসরায়েলে এসে আশ্রয় নেন।


ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা আসার পর দিন থেকে ব্রিটিশ শাসনাধীন ফিলিস্তিনে যে যুদ্ধ শুরু হয়, তাতে সাড়ে সাত লাখের মতো আরব নিজেদের আবাস ছেড়ে পার্শ্ববর্তী জর্ডান, লেবানন, সিরিয়ায় আশ্রয় নেন। অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে বসবাস শুরু করেন। নিহত হয় অন্তত ১৫ হাজার ফিলিস্তিনি। ইহুদিরা দেশটির ৭৮ শতাংশ দখল করে নেয়। বাকি ২২ শতাংশ ছিল এর ভেতরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন এলাকা।   


যুক্তরাষ্ট্রের ঘণিষ্ট মিত্র ইসরায়েল ওই সময় দাবি করেছিল, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়ার পরদিনই পাঁচটি আরব দেশ তাদের আক্রমণ করেছে এবং এই হামলার কারণেই এতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।


১৯৪৯ সালে অস্ত্রবিরতির কারণে যুদ্ধ সাময়িক স্থবির হলেও এই সংঘাত মূলত পুরোপুরি আর থামেনি কখনও। ফিলিস্তিনিরা ১৯৪৮ সালের ১৫ মে যুদ্ধ শুরুর দিনটিকে প্রতি বছর ‘নাকাবা’ দিবস বা বিপর্যয়ের দিন হিসেবে পালন করে।


ইসায়েলের বসতির ফাঁকে ফোঁকরে এখনও যেসব আরব-ফিলিস্তিনি বসবাস করছে, তাদেরই বিভিন্ন আন্দোলনরত গোষ্ঠী লড়াই করে চলেছে। ইসরায়েলের জনসংখ্যার তুলতায় ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা এখন প্রায় ২০ শতাংশের মতো। 

আরো পড়ুন:

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post

Basketball

Racing