মাসনুন দোয়া সমূহ - বিভিন্ন সময়ের দো‘আ সমূহ

 মাসনুন দোয়া সমূহ - বিভিন্ন সময়ের দো‘আ সমূহ

মাসনুন দোয়া সমূহ - বিভিন্ন সময়ের দো‘আ সমূহ

 বিভিন্ন সময়ের দো‘আ সমূহ

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’।

اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’। [105]


নতুন চাঁদ দেখার দো‘আ

اَللهُ أَكْبَرُ اَللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ وَالتَّوْفِيْقِ لِمَا تُحِبُّ وَتَرْضَى، رَبِّىْ وَرَبُّكَ اللهُ

উচ্চারণ : আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হুম্মা আহিল্লাহূ ‘আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমা-নি, ওয়াস্‌সালা-মাতি ওয়াল ইসলা-মি, ওয়াত্‌তাওফীক্বি লিমা তুহিববু ওয়া তারযা; রব্বী ওয়া রব্বুকাল্লা-হ 

অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের উপরে চাঁদকে উদিত করুন শান্তি ও ঈমানের সাথে, নিরাপত্তা ও ইসলামের সাথে এবং আমাদেরকে ঐ সকল কাজের ক্ষমতা দানের সাথে, যা আপনি ভালবাসেন ও যাতে আপনি খুশী হন। (হে চন্দ্র!) আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ’।[106]


ঝড়ের সময় দো‘আ

(ক) ঝড়ের সময় দো‘আ :

اَللَّهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا فِيْهَا وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا فِيْهَا وَمِنْ شَرِّ مَا اُرْسِلَتْ بِهِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা ফীহা ওয়া খায়রা মা উরসিলাত বিহী; ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রিহা ওয়া শাররি মা ফীহা ওয়া মিন শাররি মা উরসিলাত বিহী’।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে এর মঙ্গল, এর মধ্যকার মঙ্গল ও যা নিয়ে ওটি প্রেরিত হয়েছে, তার মঙ্গল সমূহ প্রার্থনা করছি এবং আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর অমঙ্গল হ’তে, এর মধ্যকার অমঙ্গল হ’তে এবং যা নিয়ে ওটি প্রেরিত হয়েছে, তার অমঙ্গল সমূহ হ’তে’।[107] অন্য বর্ণনায় এসেছে, اَللَّهُمَّ لَقْحًا لاَ عَقِيْمًا আল্লা-হুম্মা লাক্বহান লা ‘আক্বীমান’ (হে আল্লাহ! মঙ্গলপূর্ণ কর, মঙ্গলশূন্য নয়)। [108]

(খ) বজ্রের আওয়ায শুনে দো‘আ :

سُبْحَانَ الَّذِىْ يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلآئِكَةُ مِنْ خِيْفَتِهِ، ( الرعد 13)

উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লাযী ইয়ুসাবিবহুর রা‘দু বিহামদিহী ওয়াল মালা-ইকাতু মিন খীফাতিহি’।

অনুবাদ : মহা পবিত্র সেই সত্তা যাঁর গুণগান করে বজ্র ও ফেরেশতামন্ডলী সভয়ে’।[109]

(গ) ঝড়-বৃষ্টির ঘনঘটায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়তে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, এগুলিই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে অন্য সবকিছু থেকে’।[110]

উল্লেখ্য যে, এই সময় আল্লা-হুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাযাবিকা অলা তুহলিকনা বি‘আযাবিকা ওয়া ‘আ-ফিনা ক্বাবলা যালিকা মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’। [111]

রোগী পরিচর্যার দো‘আ

রোগীর মাথায় ডান হাত রেখে বা দেহে ডান হাত বুলিয়ে দো‘আ পড়বে-

أَذْهِبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَّ يُغَادِرُ سَقَمًا-

(১) উচ্চারণ : আযহিবিল বা’স, রব্বান না-স! ওয়াশ্ফি, আনতাশ শা-ফী, লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উকা, শিফা-আল লা ইউগা-দিরু সাক্বামা।

অনুবাদ : ‘কষ্ট দূর কর হে মানুষের প্রতিপালক! আরোগ্য দান কর। তুমিই আরোগ্য দানকারী। কোন আরোগ্য নেই তোমার দেওয়া আরোগ্য ব্যতীত; যা কোন রোগীকে ধোঁকা দেয় না’। [112]

(২) অথবা لاَ بَأْسَ طَهُوْرٌ إنْ شآءَ اللهُ‘লা বা’সা ত্বহূরুন ইনশা-আল্লাহ’। ‘কষ্ট থাকবে না। আল্লাহ চাহে তো দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন’। [113]

(৩) অথবা দেহের ব্যথাতুর স্থানে (ডান) হাত রেখে রোগী তিনবার ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। অতঃপর সাতবার নিম্নের দো‘আটি পাঠ করবে,

أَعُوْذُ بِعِزَّةِ اللهِ وَقُدْرَتِه مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ

আ‘ঊযু বি‘ইযযাতিল্লা-হি ওয়া ক্বুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহা-যিরু’ (আমি যে ব্যথা ভোগ করছি ও যে ভয়ের আশংকা করছি, তার অনিষ্ট হতে আমি আল্লাহর সম্মান ও শক্তির আশ্রয় প্রার্থনা করছি)’।

রাবী ওছমান বিন আবুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, আমি এটা করি এবং আল্লাহ আমার দেহের বেদনা দূর করে দেন।[114]

(৪) অথবা সূরা ফালাক্ব ও নাস পড়ে দু’হাতে ফুঁক দিয়ে রোগী নিজে অথবা তার হাত ধরে অন্য কেউ যতদূর সম্ভব সারা দেহে বুলাবে। [115]


নতুন কাপড় পরিধানকালে দো‘আ

اَلْحَمْدُ ِللهِ الَّذِىْ كَسَانِىْ هَذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّىْ وَلاَ قُوَّةٍ

উচ্চারণ : আলহাম্দুলিল্লা-হিল্লাযি কাসা-নী হা-যা ওয়া রাঝাক্বানীহি মিন গায়রে হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওয়াতিন।

অনুবাদ : ‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি আমার কোন ক্ষমতা ও শক্তি ছাড়াই আমাকে এই কাপড় পরিধান করিয়েছেন ও এটি প্রদান করেছেন’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এটা পাঠ করে, আল্লাহ তার আগে-পিছের সকল গোনাহ মাফ করে দেন।[116]

(ক) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, গোড়ালীর নিচে কাপড় যতটুক যাবে ততটুকু জাহান্নামে পুড়বে। [117] কিন্তু মহিলারা গোড়ালীর নিচেও কাপড় পরিধান করতে পারবেন। [118]

(খ) তিনি বলেন, ‘তোমরা সাদা পোষাক পরিধান কর। কেননা এটি তোমাদের উত্তম পোষাক সমূহের অন্যতম’...।[119]

বিবাহের পর নবদম্পতির জন্য দো‘আ

(ক) বিবাহের পর নবদম্পতির জন্য দো‘আ :

بَارَكَ اللهُ لَكُمَا وَبَارَكَ عَلَيْكُمَا وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِيْ خَيْرٍ-

বা-রাকাল্লা-হু লাকুমা ওয়া বা-রাকা ‘আলাইকুমা ওয়া জামা‘আ বায়নাকুমা ফী খায়রিন। (এই বিবাহে আল্লাহ তোমাদের জন্য বরকত দান করুন ও তোমাদের উপর বরকত দান করুন এবং তোমাদের উভয়কে কল্যাণের সাথে একত্রিত করুন)। [120] অথবা বলবে, اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ আল্লা-হুম্মা বা-রিক লাহুম (হে আল্লাহ! তুমি তাদেরকে বরকত দাও)। বিয়ের খবর শুনে বরকে বলবে, بَارَكَ اللهُ لَكَ বা-রাকাল্লা-হু লাকা (আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন!)। [121]

উল্লেখ্য যে, ব্যক্তিগত ভাবে প্রত্যেকে নবদম্পতির উদ্দেশ্যে উক্ত দো‘আ পড়বেন। এ সময় দু’হাত তুলে সম্মিলিত ভাবে মুনাজাত করার প্রথাটি ভিত্তিহীন এবং এসময় বরের দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার প্রথাটিও প্রমাণহীন।

(খ) বিবাহের পর স্ত্রীর জন্য স্বামীর দো‘আ :

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা জাবালতাহা ‘আলাইহি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা ‘আলাইহি।

অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তার মঙ্গল চাই এবং তার সেই কল্যাণময় স্বভাব প্রার্থনা করি, যার উপর তুমি তাকে সৃষ্টি করেছ। আর আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই তার অনিষ্ট হ’তে এবং সেই মন্দ স্বভাবের অনিষ্ট হ’তে, যা দিয়ে তুমি তাকে সৃষ্টি করেছ’। এই সময় স্ত্রীর কপালের চুল ধরে স্বামী উক্ত বরকতের দো‘আটি করবে। [122] এর মধ্যে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়াশীল হয়ে দাম্পত্য জীবন যাপন করার ইঙ্গিত রয়েছে।

সংকটকালীন দো‘আ

(ক) يَا حَىُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ ‘ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূমু বিরাহমাতিকা আস্তাগীছ’ (হে চিরঞ্জীব! হে বিশ্বচরাচরের ধারক! আমি আপনার রহমতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি)। আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন কোন দুঃখ বা সংকটের সম্মুখীন হতেন, তখন এই দো‘আটি পড়তেন। [123]

(খ) ভূমিকম্প বা যে কোন আকস্মিক বিপদে বলবে, لآ إِلَهَ اِلاَّ اللهُ লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ’ (নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত)।[124] অথবা এর সাথে উপরের দো‘আটি পড়বে। অথবা বলবে,আল্লা-হুম্মা হাওয়া-লায়না অলা ‘আলায়না (হে আল্লাহ! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নাও। আমাদের উপর দিয়ো না)। [125]

(গ) اَللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُبِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ وَدَرَكِ الشَّقَاءِ وَسُوْءِ الْقَضَاءِ وَشَمَاتَةِ الْأَعْدَاءِ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাক্বা-ই, ওয়া সূ’ইল ক্বাযা-ই ওয়া শামা-তাতিল আ‘দা-ই’(হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি অক্ষমকারী বিপদের কষ্ট হ’তে, দুর্ভোগের আক্রমণ হ’তে, মন্দ ফায়ছালা হ’তে এবং শত্রুর খুশী হওয়া থেকে)। [126]

(ঘ) اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ، وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ، وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ، وَجَمِيْعِ سَخَطِكَ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন যাওয়া-লি নি‘মাতিকা ওয়া তাহাউউলি ‘আ-ফিয়াতিকা ওয়া ফুজা-আতি নিক্বমাতিকা ওয়া জামী‘ই সাখাত্বিকা’ (হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি আমার থেকে আপনার নে‘মত চলে যাওয়া হ’তে, আপনার দেওয়া সুস্থতার পরিবর্তন হ’তে, আপনার শাস্তির আকস্মিক আক্রমণ হ’তে এবং আপনার যাবতীয় অসন্তুষ্টি হ’তে)।[127]

(ঙ) اَ للهُ اللهُ رَبِّي لاَ أُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا আল্লাহ আল্লাহ রব্বী লা উশরিকু বিহী শাইয়ান (আল্লাহ আল্লাহ আমার প্রতিপালক! আমি তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করি না)’।[128]

তওবা ও ইস্তেগফার

আল্লাহ তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন, وَتُوْبُوْا إِلَى اللهِ جَمِيْعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে ফিরে যাও। তাহ’লে তোমরা সফলকাম হবে’ (নূর ২৪/৩১)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে যাও। কেননা আমি দৈনিক একশ’ বার তওবা করি।[129] তিনি বলেন, ‘আল্লাহ সবচেয়ে খুশী হন বান্দা তওবা করলে’। [130] তিনি আরও বলেন, كُلُّ بَنِى آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الْخَطَّائِينَ التَّوَّابُونَ ‘সকল আদম সন্তান ভুলকারী। আর ভুলকারীদের মধ্যে সেরা তারাই, যারা তওবাকারী’।[131]

তওবা শুদ্ধ হবার শর্তাবলী : আল্লাহ ও বান্দার মধ্যকার বিষয় হ’লে তওবা শুদ্ধ হওয়ার শর্ত হ’ল তিনটি।
(১) ঐ পাপ থেকে বিরত থাকবে
(২) কৃত অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হবে
(৩) ঐ পাপ পুনরায় না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হবে। আর যদি পাপটি বান্দার সাথে সম্পৃক্ত হয়, তাহ’লে তাকে ৪র্থ শর্ত হিসাবে বান্দার নিকটে ক্ষমা চাইতে হবে। কোন হক বা কিছু পাওনা থাকলে তাকে তা বুঝে দিতে হবে। নইলে তার তওবা শুদ্ধ হবে না’।[132]

তওবার দো‘আ :

(১) أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِيْ لآ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহে’ (আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক এবং আমি তাঁর দিকেই ফিরে যাচ্ছি (বা তওবা করছি)।[133]

(২) لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায যোয়া-লিমীন’ (হে আল্লাহ! তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি মহা পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যখন কোন মুসলিম কোন সমস্যায় এই দো‘আর মাধ্যমে তার পালনকর্তাকে আহবান করে, যা ইউনুস মাছের পেটে গিয়ে করেছিলেন, তখন আল্লাহ তার আহবানে সাড়া দেন। [134]

(৩) رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ রব্বিগফিরলী ওয়া তুব ‘আলাইয়া, ইন্নাকা আনতাত তাউওয়া-বুর রহীম’ (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর ও আমার তওবা কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি তওবা কবুলকারী ও দয়াবান) ১০০ বার।[135]

পিতামাতার জন্য দো‘আ

২১. (ক) পিতামাতার জন্য দো‘আ :

(1) رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْراً، (الإسراء 24)-

‘রব্বীরহামহুমা কামা রববাইয়া-নী ছগীরা’ (হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের উপরে দয়া কর, যেমন তারা আমাকে ছোটকালে দয়ার সাথে প্রতিপালন করেছিলেন)’ (ইসরা ১৭/২৪)। কুরআনের আয়াত হওয়ার কারণে দো‘আটি সিজদায় পড়া যাবে না। তবে শেষ বৈঠকে দো‘আয়ে মাছূরাহর পরে পড়া যাবে।

(২) رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ-

রব্বানাগফিরলী ওয়ালিওয়া-লিদাইয়া ওয়া লিলমু’মিনীনা ইয়াউমা ইয়াক্বূমুল হিসা-ব’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর, যেদিন হিসাব কায়েম হবে’ (ইবরাহীম ১৪/৪১)

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ জান্নাতে তার নেককার বান্দাদের মর্যাদার স্তর উন্নীত করবেন। তখন বান্দা বলবে, হে আল্লাহ! কেন এটা আমার জন্য করা হচ্ছে? জবাবে আল্লাহ বলবেন, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার কারণে (بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ)’। [136]

(খ) ঋণদাতা (বা যে কোন দাতার) জন্য দো‘আ :

(খ) ঋণদাতা (বা যে কোন দাতার) জন্য দো‘আ :

بَارَكَ اللهُ تَعَالَى فِيْ أَهْلِكَ وَمَالِكَ ‘বা-রাকাল্লা-হু তা‘আলা ফী আহলিকা ওয়া মা-লিকা’ (মহান আল্লাহ আপনার পরিবারে ও সম্পদে বরকত দান করুন)। [137]

উল্লেখ্য যে, বহুল প্রচলিত দো‘আ بَارَكَ اللهُ فِيْكَ (أَوْ فِيْكُمْ) ‘বা-রাকাল্লা-হু ফীকা বা ফীকুম’ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’। [138] তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বরকতের দো‘আ করেছেন বলে ছহীহ হাদীছ সমূহে প্রমাণ রয়েছে। সে হিসাবে এটি বলা জায়েয।

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post

Basketball

Racing