আসসালামু আলাইকুম, আজকে আমরা ডেঙ্গু জ্বর ও ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা সম্পর্কে জানবো। বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। হাসপাতালগুলোতে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসার জন্য অসংখ্য রোগীরা ভিড় করছে।
এটি আমাদের দেশে একটি মহামারী আকার ধারণ করতে চলেছ। সবচেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে অনেকেই এই জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে না জেনে প্রতারিত হয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করে ডেঙ্গু রোগীর টেস্ট বা চিকিৎসা করাচ্ছেন।
এইজন্য আপনাকে সর্বপ্রথম ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানতে হবে এবং এর চিকিৎসা নিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো জানা থাকলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে কিনা।
ডেঙ্গু একটি মশা বাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশার কামড়ে হয়ে থাকে। তাই আজকের পোস্টে আপনাদের জানাবো ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে।
ডেঙ্গু জ্বর কি?
উপক্রান্তীয় এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলের গ্রীষ্ম প্রধান দেশ ডেঙ্গু এবং ডেঙ্গু জ্বরের একটি অত্যন্ত সাধারণ সেক্টর বাহিত ভাইরাস রোগে গঠিত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পশ্চিম প্রান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ আমেরিকা এবং আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব দেখা যায়।
ভারতবর্ষে বর্ষার সময় এই রোগের বৃদ্ধি পায়। ডেঙ্গু সংক্রমনের হার সবচেয়ে বেশি থাকে মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত। এবং এপ্রিল মাসে এই হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় ও জুন জুলাই মাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাধারণত হসপিটাল গুলোতে অনেক বেশি দেখা যায়।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের কোন বিশেষ লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে। সঠিক চিকিৎসায় বাড়িতে থেকেই এই রোগ নিরাময় করা সম্ভব হয়। শুধুমাত্র বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে হসপিটালে ভর্তির প্রয়োজন হয়।
সেই ক্ষেত্রে ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে রোগী সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে জনমানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি ভীষণ জরুরি এবং সামান্য কিছু উপায় মেনে চললে ডেঙ্গুর প্রভাব থেকে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারবো। এবং ডেঙ্গু রোগ লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ার হাত থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু জ্বর হল একটি মশা বাহিত ভাইরাস ঘটিত রোগ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর বিশেষ কোন উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায় না। শুধু অল্প কিছু ক্ষেত্রেই রোগীর প্রভাব গভীর হয়। চলুন দেখে আসি ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো কি কি:-
- উচ্চ জ্বর ( ৪০°c / 104°F )
- মাথা ঘুরানো
- ত্বকের বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি
- তীব্র মাথাব্যথা হওয়া
- বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
- চোখের পিছনে ব্যথা অনুভূতি হওয়া
- গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
- মাংসপেশী এবং অস্বস্তি যন্ত্রনা হওয়া
- প্রচন্ড পেট ব্যথা করা
- অনিয়ন্ত্রিত পায়খানা
- মারি বা নাক থেকে রক্ত পড়া
- ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ
- প্রসাবে এবং মৌলের সাথে রক্ত বের হওয়া
- দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া
- ক্লান্তি অনুভব করা
- বিরক্তি এবং অস্থিরতা ভাব হওয়া
- তোমাগত বমি হওয়া
এই সকল উপসর্গগুলি ডেঙ্গু সংক্রমনের চার থেকে দশ দিনের মধ্যে দেখা যায়। সাধারণত দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত উপসর্গগুলি স্থায়ী হতে পারে। দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে রোগের ভয়াবহতা অনেক বৃদ্ধি পায়। সেই কারণে পূর্বে ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্ত ব্যক্তিদের অতিরিক্ত সর্তকতা মেনে চলতে হবে।
ডেঙ্গু জীবাণু মানুষের শরীরে রক্তনালী গুলোকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। যার ফলে রক্তনালিতে ছিদ্র তৈরি হয় এবং রক্ত প্রবাহে ক্লট তৈরীর কোষগুলির সংখ্যা ও কমে যেতে থাকে।
এর জন্য মানুষের শরীরে শখ লাগা শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত যে কোন অঙ্গের ক্ষতি এবং শেষ পর্যন্ত রোগীর মৃত্যু হতে পারে। রোগীর শরীরে গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ গুলির কোন একটি দেখা দিলে অতি দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত বা রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে অন্যথায় রোগীর প্রাণ সংকটে পড়তে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
ড্যাংকোর চিকিৎসা বিশেষ কোনো ঔষধ বা প্রতিষেধক এখনো পর্যন্ত বিশ্বের কোন দেশেই আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে গবেষকরা কাজ করে যাচ্ছেন ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কার করার জন্য। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘরোয়া চিকিৎসায় কমে যায়।
সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ দিয়ে যন্ত্রণা এবং জ্বরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেন। Non sterodial প্রদাহ প্রতিরোধ ঔষধের রক্তক্ষরণে সম্ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ডেঙ্গু জ্বরের মাত্রা অতিরিক্ত ভাবে বৃদ্ধি পেলে রোগীকে দ্রুত হসপিটালে ভর্তি এবং ডাক্তারি নজরদারিতে রাখা একান্ত জরুরি। হসপিটালে ডেঙ্গু রোগীদের শিরায় ইলেক্ট্রোলাইট লবণ তরল দেওয়া হয় এতে শরীরে প্রয়োজনীয় পানি এবং লবণের যোগান বজায় থাকে।
ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া চিকিৎসা
- ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। শরীরে জলীয় অংশ বেশি থাকলে মাথাব্যথা ও পেশী ব্যথা কম হবে।
- ডেঙ্গু জ্বরে প্ল্যাটিলেট কমে যায়। তাই প্লাটিলেট বাড়ে এমন খাবার খেতে হবে। যেমন সাইকাস ফল, কাঠবাদাম, সূর্যমুখী বীজ, গ্রিন টি, ক্যাপসিকাম,পালং শাক,আদা,রসুন ও হলুদ খাওয়া যেতে পারে।
- এছাড়াও পেয়ারার শরবত পান করা যেতে পারে। ডেঙ্গু রোগীকে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই পানিটিও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে ডেঙ্গু জ্বর থেকে ঘরোয়া ভাবে মুক্তি দিতে সম্ভব।
- রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে নিমপাতার রস খাওয়াতে হবে। রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে নিম পাতার রস খুবই ভালো কাজ করে।
- নিম পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দ্বিগুণ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এটি বিশেষ করে রক্তের রক্ত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
সর্বশেষ: আজকের পোস্টে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আশা করা যায় সম্পূর্ণ আলোচনাটি মনোযোগ সহকারে পড়লে ডেঙ্গু জ্বরের অথবা ডেঙ্গুর প্রভাব থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।
Tag:ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা,ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ,ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা,ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ,ডেঙ্গু জ্বর,ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও করণীয়,ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ,ডেঙ্গু,শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা,ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা ও লক্ষণ,শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কী কী ও কখন হাসপাতালে নেবেন?,ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়,ডেঙ্গু জ্বরের খাবার,ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার,শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার,বাচ্চার ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ,ডেঙ্গু জ্বর ও প্রতিকার।
Post a Comment